BCCI: ভারতে ক্রিকেট শুধুই একটি খেলা নয়, এটি একটি আবেগ, একটি সংস্কৃতি এবং একটি বিশাল শিল্প। এর পেছনে যে সংগঠনটি সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে, সেটি হলো বিসিসিআই (BCCI)—ভারতের ক্রিকেট নিয়ন্ত্রণকারী মূল সংস্থা। তবে বিসিসিআই কেবল একটি ক্রীড়া প্রতিষ্ঠান নয়, বরং এটি একটি লাভজনক ও অত্যন্ত ধনী সংগঠন। বাস্তবতা হলো, বিসিসিআই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ক্রিকেট বোর্ড।
BCCI: বিসিসিআই-এর নেট ওয়ার্থ: একটি আর্থিক চিত্র
BCCI: ২০২৩ সালের হিসাব অনুযায়ী, বিসিসিআই-এর নেট ওয়ার্থ দাঁড়িয়েছে আনুমানিক ১৮,০০০ কোটি রুপি (প্রায় ২.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)। এই পরিমাণ নেট ওয়ার্থ অনেক দেশের বার্ষিক ক্রীড়া বাজেটকেও ছাড়িয়ে যায়। ২০২১ সালেও বিসিসিআই-এর নেট ওয়ার্থ ছিল প্রায় ১৪,৪৮৯ কোটি টাকা, যা থেকে বোঝা যায়, সংস্থাটি প্রতিবছর ব্যাপক হারে আয় বৃদ্ধি করছে।
আয়ের প্রধান উৎস
BCCI: বিসিসিআই-এর রাজস্ব বা আয়ের উৎস অনেক। নিচে এর একটি বিস্তারিত তালিকা দেওয়া হলো:
১. আইপিএল (IPL)
BCCI: বিসিসিআই-এর সর্ববৃহৎ আয়ের উৎস হলো ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ। শুধুমাত্র টিভি সম্প্রচার স্বত্ব (broadcast rights) বিক্রি করেই বিসিসিআই কয়েক হাজার কোটি টাকা আয় করে।
২. ব্রডকাস্টিং রাইটস
৩. স্পন্সরশিপ
বিভিন্ন টুর্নামেন্টে স্পন্সর হিসেবে থাকে Paytm, BYJU’S, Dream11, MPL ইত্যাদি। প্রতিটি সিরিজের স্পন্সরশিপ বিসিসিআই-কে আলাদা করে আয় এনে দেয়।
৪. গেট রেভিনিউ ও টিকিট বিক্রি
স্টেডিয়ামে খেলা হলে টিকিট বিক্রয় থেকেও বিসিসিআই উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আয় করে।
৫. আইসিসি (ICC) রেভিনিউ শেয়ার
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের পক্ষ থেকে বিসিসিআই প্রতিবছর রেভিনিউ শেয়ার পায়, যেহেতু ভারতীয় মার্কেট ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় বাজার।
বিসিসিআই-এর ২০২১ সালের আয়ের বিবরণ (টেবিল)
আয়ের উৎস | আনুমানিক আয় (কোটি টাকা) | শতাংশ অনুপাতে |
---|---|---|
আইপিএল | ₹৪,০০০ কোটি | ৪৫% |
ব্রডকাস্টিং রাইটস | ₹৩,৫০০ কোটি | ৪০% |
স্পন্সরশিপ | ₹৮০০ কোটি | ৯% |
টিকিট বিক্রি ও গেট রেভিনিউ | ₹৩০০ কোটি | ৩% |
আইসিসি রেভিনিউ শেয়ার | ₹২০০ কোটি | ৩% |
মোট আয় | ₹৮,৮০০ কোটি | ১০০% |
বিসিসিআই-এর খরচের খাত
১. ক্রিকেটারদের বেতন ও বোনাস
জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের বার্ষিক চুক্তি অনুযায়ী A+, A, B ও C গ্রেড অনুযায়ী বেতন দেওয়া হয়। এছাড়াও ম্যাচ প্রতি পারিশ্রমিক, পারফরম্যান্স বোনাস, এবং ইনসেনটিভ থাকে।
২. স্টেডিয়াম ও অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ
বিভিন্ন স্টেডিয়াম সংস্কার, নতুন অবকাঠামো নির্মাণ, এবং অ্যাকাডেমির জন্য বিসিসিআই বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে।
৩. ঘরোয়া ক্রিকেট ও উন্নয়নমূলক প্রোগ্রাম
রনজি ট্রফি, বিজয় হাজারে, মহিলা ক্রিকেট, অনূর্ধ্ব-১৯ প্রোগ্রামসহ দেশের ক্রিকেট ব্যবস্থাপনার পেছনে বিসিসিআই বড় বাজেট বরাদ্দ রাখে।
বিসিসিআই-এর ব্যয়ের বিবরণ (টেবিল)
ব্যয়ের খাত | আনুমানিক ব্যয় (কোটি টাকা) | শতাংশ অনুপাতে |
---|---|---|
ক্রিকেটারদের বেতন ও বোনাস | ₹১,২০০ কোটি | ৩০% |
অবকাঠামো ও স্টেডিয়াম | ₹১,০০০ কোটি | ২৫% |
ঘরোয়া ক্রিকেট ও নারী ক্রিকেট | ₹৮০০ কোটি | ২০% |
প্রশাসনিক ব্যয় | ₹৬০০ কোটি | ১৫% |
CSR ও উন্নয়নমূলক প্রোগ্রাম | ₹৪০০ কোটি | ১০% |
মোট ব্যয় | ₹৪,০০০ কোটি | ১০০% |
আইপিএলের প্রভাব
আইপিএল বিসিসিআই-এর জন্য একটি আর্থিক বিপ্লব এনেছে। ২০০৮ সালে যাত্রা শুরু করা এই ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ আজ প্রায় $১০ বিলিয়নের ব্র্যান্ড ভ্যালু অর্জন করেছে। শুধুমাত্র মিডিয়া রাইটস বিক্রি করেই বিসিসিআই ২০২৩ সালে ₹৪৮,৩৯০ কোটি টাকার মালিকানা হস্তান্তর করে।
এর ফলে বিসিসিআই-এর রাজস্বের প্রায় অর্ধেকই এখন আসে IPL থেকে।
আন্তর্জাতিক প্রভাব
ভারতীয় বাজার এতটাই বড় যে, ICC-ও এখন বিসিসিআই-এর ওপর নির্ভরশীল। একটি ICC ইভেন্ট যদি ভারতে অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে টিকিট বিক্রি থেকে শুরু করে স্পন্সরশিপ পর্যন্ত সর্বত্র বিশাল লাভ হয়।
তাছাড়া বিসিসিআই-এর আর্থিক শক্তির কারণে বিশ্ব ক্রিকেটে এর রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক প্রভাবও ব্যাপক।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও বিনিয়োগ
বিসিসিআই ভবিষ্যতে আরও কিছু বড় প্রকল্পে বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা করছে:
- নতুন একাডেমি ও কোচিং সেন্টার
- মহিলা আইপিএল (WPL) সম্প্রসারণ
- ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ও লাইভ স্ট্রিমিং-এ বিনিয়োগ
- বায়ো-সিকিউর বাবল ও প্রযুক্তি-নির্ভর প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা
এই সব পরিকল্পনা বিসিসিআই-এর নেট ওয়ার্থ আরও বাড়াবে বলে আশা করা যায়।
বিসিসিআই কেবল ভারতের নয়, পুরো বিশ্বের ক্রিকেট অর্থনীতির নিয়ন্ত্রক শক্তি। তাদের বিশাল নেট ওয়ার্থ, বিপুল রাজস্ব, এবং দূরদর্শী পরিকল্পনা ক্রীড়াজগতে বিসিসিআই-কে একটি অনন্য অবস্থানে নিয়ে গেছে। ২০২১ সাল ছিল বিসিসিআই-এর জন্য একটি গেম-চেঞ্জার বছর, যেখানে COVID-পরবর্তী বাস্তবতায়ও তারা রাজস্ব ও শক্তিতে অন্যদের ছাড়িয়ে গেছে।
ক্রিকেট যেমন একটি খেলা, তেমনি বিসিসিআই এখন একটি বাণিজ্যিক সাম্রাজ্য। আর এর পেছনে রয়েছে দক্ষ পরিচালনা, বিশাল ফ্যান-বেস, এবং বিপুল অর্থনৈতিক মডেল।